সীমান্তবর্তী গারো পাহাড় অধ্যুষিত শেরপুরের চার উপজেলার মোট ৬ হাজার একর জমিতে চা চাষের প্রকল্প গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ চা বোর্ড। ২০২১ সাল নাগাদ শুরু হবে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ। ইতোমধ্যেই সার্ভেসহ প্রাথমিক কর্মকাণ্ড সম্পন্ন করেছে বিশেষজ্ঞ দল। জেলার শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী উপজেলার গারো পাহাড়সহ নকলা উপজেলায় এই চা চাষ করা হবে।
“বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলায় ক্ষুদ্রায়তন চা চাষ সম্প্রসারণ” নামে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে প্রতিবছর ১.৫ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদনের পাশাপাশি প্রায় দুই হাজার লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। সেই সাথে গারো পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্যে ভরা প্রকৃতিতে চা চাষ প্রকল্প যোগ হওয়ায় পর্যটন সমৃদ্ধ হবে শেরপুর জেলা।
জানা যায়, সিলেট, চট্টগ্রাম এবং পঞ্চগড়ের পর চা চাষাবাদের চতুর্থ তম অঞ্চল হিসেবে আওতাভুক্ত হচ্ছে গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চল। বৃহত্তর ময়মনসিংহের জেলাসমূহে চা চাষের সম্ভাবনা জরিপ করার জন্য বাংলাদেশ চা বোর্ড ২০০৪ সালে সরেজমিনে পরিদর্শন, মৃত্তিকা নমুনা সংগ্রহ করে একটি সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন প্রদান করে।
ওই জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, পাহাড়ি এ জনপদের মাটির গুণাগুণ ও আবহাওয়া চা চাষাবাদের অত্যন্ত উপযোগি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালে আবারও সম্ভাব্যতা যাচাই করে বৃহত্তর ময়মনসিংহ বিভাগে ১৩ হাজার ৬৪৫ একর জমি চা চাষের আওতায় আনার পরিকল্পনা করা হয়। চা চাষ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ৭৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প প্রস্তাব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এ অঞ্চলের অন্তত দুই হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। সেই সাথে এ অঞ্চল থেকে বছরে প্রায় ১.৫ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হবে, যা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি ও করা যাবে।
বাংলাদেশ চা বোর্ড শেরপুরের ৩টি পাহাড়ি এলাকাসহ ৬ হাজার একর জমিতে চা চাষের উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। এরমধ্যে জেলার শ্রীবরদীতে ১ হাজার ৫০ একর, ঝিনাইগাতীতে ১ হাজার ৮৫৫ একর ও নালিতাবাড়ীর গারো পাহাড়ে ২ হাজার ৫০০ একর জমিতে চা চাষ সম্ভব।
এদিকে উদ্যোক্তা আমজাদ হোসাইন ফনিক্স তার ‘গারো হিল্স টি’ কোম্পানির উদ্যোগে ২০১৮ সালে শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলায় ৬ জন, ঝিনাইগাতি উপজেলায় ১৩ জন, নালিতাবাড়ী উপজেলায় ৩ জন এবং নকলা উপজেলায় ৪ জন মোট ২৬ জন ক্ষুদ্র চাষির মাঝে ২৬ হাজার চারা বিনামূল্যে বিতরণ করেন। এসব ক্ষুদ্র চাষিদের প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সুবিধা দিয়ে প্রায় ৫ একর জমিতে পরীক্ষামূলক চা চাষ করে সফলতা পেয়েছেন।
উদ্যোক্তা আমজাদ হোসাইন ফনিক্স জানান, ‘গারো হিল্স টি’ কোম্পানীর উদ্যোগে ক্ষুদ্র চা চাষি তৈরি করা হচ্ছে। এখানে ওইসব চাষিরা নিজেদের জমিতে চা চাষ করে নিজেরাই বাগানের মালিক ও শ্রমিক হবেন। এ জন্য আমরা তাদের বিনামূল্যে চারা এবং প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন সাপোর্ট দিয়ে আসছি। পরবর্তীতে উৎপাদিত চা তাদের কাছ থেকে বাজারমূল্যে কেনা হবে।
চা চাষ প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সম্প্রতি চা বোর্ডের পরিচালক ড. মোহাম্মদ আলী ও চা গবেষণা ইন্সস্টিটিউট এর ঊর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শামীম আল মামুনসহ ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল শেরপুরের চা চাষ উপযোগি এলাকাসমূহ পরিদর্শন করে উদ্যোক্তা আমজাদ হোসাইন ফনিক্স এর উদ্যোগে তৈরি ক্ষুদ্র চা চাষিদের নিয়ে মতবিনিময় করেন।
চা গবেষণা ইন্সস্টিটিউটের ঊর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শামীম আল মামুন জানান, প্রকল্পের অর্থায়নে চা চাষিদের মাঝে বিনামূল্যে চা গাছের চারা বিতরণ ছাড়াও চারা রোপণ, পরিচর্যা, পাতা চয়ন, পোকা-মাকড় ও রোগ-বালাই দমন এবং কাচা পাতা দিয়ে হাতে চা তৈরি ইত্যাদি বিষয়ে সার্বক্ষণিক প্রশিক্ষণ ও তদারকি করা হবে। এছাড়াও চা বোর্ডের একটি অফিস থাকবে। অফিসের মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত চা কেনা হবে এবং উৎপাদনে যাওয়ার আগ পর্যন্ত চা চাষিদের প্রণোদনা দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের পরিচালক ড. মোহাম্মদ আলী জানান, এ প্রকল্পের আওতায় শেরপুরের নকলা, নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতি ও শ্রীবরদী উপজেলার মোট ৬ হাজার একর জমিতে চা চাষ করা হবে। তবে প্রাথমিকভাবে ১ হাজার ২৩৫ একর জমিতে শুরু হবে এর কার্যক্রম।
Posted ১:৪৭ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১
IBN- বাংলা বলি বিশ্বময় | NewsRoom
সময়